বাংলাদেশের ভ্যাট ব্যবস্থায় হিসাবরক্ষণ প্রণালি হল ভ্যাট, এস ডি, এ টি এবং টার্নওভার কর এর হিসাব রাখার একটি পদ্ধতি। যেখানে একটি কর মেয়াদে একজন ব্যবসায়ীর সরকারের কাছে প্রদেয় কর, সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্য কর এর হিসাব করে, যদি সরকার প্রাপ্য হয় উক্ত কর সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করা এবং এর সম্পৃক্ত প্রয়োজনীয় দলিলাদি সংরক্ষণ করা। ভ্যাট আইনের ধারা ১০৭ অনুযায়ী রেকর্ডপত্র এবং হিসাব সংরক্ষণ করতে হবে।
একটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান (লিমিটেড কোম্পানি) এর জন্য কি কি হিসাব সংরক্ষন করতে হবে (যেগুলো স্বাভাবিক ভাবে ম্যান্টেইন করতে হয়) তা তুলে ধরা হলঃ
১. মূসক নিবন্ধন গ্রহণ করতে হবে।
[মূসক ফরম ২.১ ও ২.২ এ আবেদনের মাধ্যমে ২.৩ গ্রহণ করতে হবে, মূসক ২.৩ হল মূসক নিবন্ধন সনদপত্র/টার্ন ওভার কর তালিকাভুক্তি সনদপত্র]
রেফারেন্সঃ ধারা – ৪, বিধি-৩, বিধি-৪ এর উপ-বিধি (৪) ও বিধি ৫ এর এর উপ-বিধি (৪)
২. উপকরণ উৎপাদ সহগ ঘোষণা (মূসক-৪.৩)।
[পূর্বের আইনের মূল্য ঘোষণা আর বর্তমান আইনে উপকরণ উৎপাদ সহগ ঘোষণা, মূসক ৪.৩ এর মাধ্যমে একটি পণ্য উৎপাদন করতে কি কি উপকরণ ব্যবহার করা হয় এবং এর অপচয় সহ মূল্য কত টাকা তা থাকে সেই সাথে এডিশন কত টাকা তা উল্লেখ্য থাকে এখানে, যার মাধ্যমে একটি পণ্যের বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ হয়]
রেফারেন্সঃ ধারা – ৩২ (৫), বিধি-২১
৩. কর চালানপত্র (মূসক-৬.৩) ম্যান্টেইন।
[কর চালানপত্র (মূসক -৬.৩) হল সেলস বা বিক্রয় এর একটি ইনভয়েজ। বিক্রেতার জন্য যেটা সেলস ইনভয়েজ ক্রেতার জন্য তা পারসেস ইনভয়েজ। যদিও বাস্তবে আমাদের দেশে ২ ধরনের ইনভয়েজ ব্যবহার হয়, একটা ভ্যাট এর ইনভয়েজ আরেকটা কমার্শিয়াল ইনভয়েজ। যাই হোক, যখন পণ্য বা সেবা সেলস হবে তখনি মূসক ৬.৩ কাটতে হবে সেটা ম্যানুয়ালি হতে পারে বা অনুমোদিত সফটওয়্যার এ হতে পারে।]
রেফারেন্সঃ ধারা – ৫১, বিধি-৪০ এর উপ-বিধি (১) এর দফা (গ)
৪. চুক্তিভিত্তিক উৎপাদনের চালানপত্র (মূসক-৬.৪) ম্যান্টেইন।
[অনেক সময় দেখা যায় একজন উৎপাদনকারী তার নিজের কারখানায় পণ্য উৎপাদন করতে না পারলে, সেটা তার উপকরণ দিয়ে অন্য কোন উৎপাদক এর কাছ থেকে উৎপাদন করিয়ে নেয়। তখন তার উপকরণ ট্রান্সফারের এর জন্য এই চালানপত্র ব্যবহার করা হয়।]
রেফারেন্সঃ বিধি-৪০ এর উপ-বিধি (১) এর দফা (ঘ)
৫. কেন্দ্রীয় নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের পণ্য স্থানান্তর চালানপত্র (মূসক-৬.৫) ম্যান্টেইন।
[যেক্ষেত্রে কোন ব্যবসায়ি দেশের অভ্যন্তরে একাধিক স্থান থেকে ব্যবসায় পরিচালনা করে থাকেন এবং এদের মধ্যে যারা কেন্দ্রীয় নিবন্ধন নিয়ে থাকেন তাঁরা তাদের পণ্য এক স্থান থেকে বা এক শাখা থেকে অন্য স্থানে বা অন্য শাখায় নেয়ার জন্য এই চালান পত্র ব্যবহার করে থাকেন।]
রেফারেন্সঃ বিধি-৪০ এর উপ-বিধি (১) এর দফা (ঙ)
৬. ক্রয় হিসাব পুস্তক (মূসক-৬.১) ম্যান্টেইন।
[সহজ ভাবে বলতে গেলে মূসক – ৬.১ হল একটি ক্রয় রেজিস্টার, যেখানে সকল প্রকার ক্রয় সংক্রান্ত তথ্য এন্ট্রি দিতে হয়। মূলত অর্থনৈতিক কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট সকল প্রকার ক্রয়ের তথ্য এই ফরমে অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। যদিও ফরমের উপরে লেখা আছে পণ্য বা সেবা প্রক্রিয়াকরণে সম্পৃক্ত এমন নিবন্ধিত বা তালিকাভুক্ত ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য]
রেফারেন্সঃ বিধি-৪০ এর উপ-বিধি (১) এর দফা (ক)
৭. বিক্রয় হিসাব পুস্তক (মূসক-৬.২) ম্যান্টেইন।
[সহজ ভাবে বলতে গেলে মূসক ৬.২ হল একটি বিক্রয় রেজিস্টার, যেখানে পণ্য বা সেবা বিক্রয় সংক্রান্ত সকল তথ্য এন্ট্রি দিতে হয়। এই রেজিস্টার মূলত উৎপাদনকারি ব্যবহার করে থাকেন।]
রেফারেন্সঃ বিধি-৪০ এর উপ-বিধি (১) এর দফা (খ)
৮. ক্রয়-বিক্রয় হিসাব (মূসক-৬.২.১) ম্যান্টেইন।
[সহজ ভাবে বলতে গেলে মূসক ৬.২.১ হল ক্রয় ও বিক্রয় হিসাব এর একটি রেজিস্টার, যেখানে পণ্য ক্রয় ও বিক্রয় সংক্রান্ত সকল তথ্য এন্ট্রি দিতে হয়। এই রেজিস্টার মূলত ট্রেডাররা ব্যবহার করে থাকেন অর্থাৎ যারা ফিনিশড পণ্য ক্রয় করে বিক্রয় করে থাকেন।]
রেফারেন্সঃ বিধি-৪০ এর উপ-বিধি (১) এর দফা (খখ)
৯. উৎসে কর কর্তন সনদপত্র (মূসক-৬.৬)
[উৎসে মূসক কর্তন করলে তার বিপরীতে একটি প্রত্যয়ন পত্র ইস্যু করতে হয়, এই প্রত্যয়ন পত্র হল উৎসে কর কর্তন সনদপত্র (মূসক ৬.৬)। সমন্বয় এর জন্য মূসক ৬.৬ ইস্যুকারি এবং গ্রহণকারী ২ জনের জন্যই প্রযোজ্য]
রেফারেন্সঃ ধারা-৫৩, বিধি-৪০ এর উপ-বিধি (১) এর দফা (চ)
১০. ক্রেডিট নোট (মূসক-৬.৭)
[অনেক সময় দেখা যায় বিক্রয়কৃত পণ্য ফেরত আসে, কখনো ফুল বা কখনো পার্সিয়াল। এই ফেরতকৃত পণ্যের হিসাব রাখার জন্যই এই ক্রেডিট নোট (মূসক ৬.৭) ম্যান্টেইন করতে হয়।]
রেফারেন্সঃ ধারা-৫২, বিধি-৪০ এর উপ-বিধি (১) এর দফা (ছ)
১১. ডেবিট নোট (মূসক-৬.৮)
[অনেক সময় দেখা যায় ক্রয়কৃত পণ্য ফেরত দেয়া হয়, কখনো ফুল বা কখনো পার্সিয়াল। এই ফেরতকৃত পণ্যের হিসাব রাখার জন্যই এই ডেবিট নোট (মূসক ৬.৮) ম্যান্টেইন করতে হয়।]
রেফারেন্সঃ ধারা-৫২, বিধি-৪০ এর উপ-বিধি (১) এর দফা (ছ)
১২. ২ (দুই) লক্ষ টাকার অধিক মূল্যমানের ক্রয়-বিক্রয় চালানপত্রের তথ্য (মূসক-৬.১০)
[পণ্য বা সেবার ক্রয় বা বিক্রয় মূল্য অর্থাৎ সরবরাহ মূল্য যখন ২ (দুই) লক্ষ বা এর বেশি হবে তখন মূসক ৬.১০ ফরম ম্যান্টেইন করতে হয়।]
রেফারেন্সঃ বিধি-৪২ এর উপ-বিধি (১)
১৩. অব্যবহৃত বা ব্যবহার অনুপযোগী উপকরণ নিষ্পত্তির আবেদনপত্র (মূসক-৪.৪)
[উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে অনেক সময় দেখা যায় উপকরণ নষ্ট হয়ে যায় বা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যায় তখন উক্ত উপকরণ এর নিষ্পত্তির জন্য মূসক ৪.৪ ফরম এর মাধ্যমে বিভাগীয় কর্মকর্তার নিকট আবেদন করতে হয়]
রেফারেন্সঃ বিধি-২৪ক
১৪. দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংসপ্রাপ্ত পণ্য নিষ্পত্তির আবেদনপত্র (মূসক-৪.৫)
[অনেক সময় দেখা যায় মজুদকৃত পণ্য বিভিন্ন দুর্ঘটনায় নষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত অথবা ধবংসপ্রাপ্ত হয়ে যায়, যা সরবরাহের অনুপযোগী হয়। তখন উক্ত পণ্যের নিষ্পত্তির জন্য মূসক ৪.৫ ফরম এর মাধ্যমে বিভাগীয় কর্মকর্তার নিকট আবেদন করতে হয়]
রেফারেন্সঃ বিধি-২৪খ
১৫. বর্জ্য (ওয়েস্ট) বা উপজাত (বাই-প্রোডাক্ট) পণ্যের সরবরাহ ও নিষ্পত্তির আবেদনপত্র (মূসক-৪.৬)
[পণ্য প্রস্তুত করতে গেলে পণ্যের বর্জ্য বা উপজাত পণ্য সরবরাহ যোগ্য বা সরবরাহ অযোগ্য যা ই হোক না কেন তা নিষ্পত্তির জন্য মূসক ৪.৬ ফরম এর মাধ্যমে বিভাগীয় কর্মকর্তার নিকট আবেদন করতে হয়]
রেফারেন্সঃ বিধি-২৪গ
১৬. মূসক দাখিল পত্র (মূসক-৯.১)
[দাখিলপত্র হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের হিসাব বিবরণী, যেখানে প্রতিষ্ঠানে মাসের সকল পণ্য বা সেবা সরবরাহ, ক্রয় ও সমন্বয় (হ্রাসকারী বা বৃদ্ধিকারী) সংক্রান্ত সকল তথ্য উল্লেখ করতে হয়]
রেফারেন্সঃ ধারা-৬৪, বিধি-৪৭
১৭. কর জমা প্রদানের সমর্থনে ট্রেজারি চালান বা অন্য কোন পদ্ধতিতে কর জমা প্রদান করা হয়ে থাকলে এর সমর্থনে প্রমাণিক দলিলাদি
[একটি কর মেয়াদে নীট কর নিরূপণ পূর্বক তা নির্ধারিত হিসাব কোডে সরকারি কোষাগারে পরিশোধ করতে হবে]
রেফারেন্সঃ ধারা-১০৭ (ছ), বিধি-২৫