জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট পাস হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ বাজেটের নাম দিয়েছেন ‘কোভিড-১৯ অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তনের’।
বৃহস্পতিবার (৩০ জুন ২০২২) স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংসদ অধিবেশনে এই বাজেট কণ্ঠভোটে পাস হয়।
শুক্রবার (১ জুলাই) থেকে এ বাজেট কার্যকর হবে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত ৯ জুন সংসদে এই বাজেট উপস্থাপন করেন। এরপর অধিবেশনজুড়ে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনা করেন সংসদ সদস্যরা (এমপি)।
বাজেট উপস্থাপনের পর ২০২১-২২ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট পাস হয় ১৩ জুন। এতে অতিরিক্ত ১৭ হাজার ৫২৪ কোটি ৬৪ লাখ ৫ হাজার টাকা ব্যয়ের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এরপর ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের ওপর টানা ১৬ দিন আলোচনা হয়। এর মধ্যে বুধবার (২৯ জুন) সংসদ অধিবেশনে অর্থ বিল-২০২২ কণ্ঠভোটে পাস হয়। সংসদ সদস্যদের অর্থ বিলের ওপর আনীত সংশোধনীগুলোর মধ্যে ১৭টি প্রস্তাব কণ্ঠভোটে গৃহীত হয়। বাকিগুলো সদস্যদের কণ্ঠভোটে নাকচ হয়েছে।
অর্থ বিলে INCOME TAX বা আয়কর, VALUE ADDED TAX (মূল্য সংযোজন কর) এবং আমদানি শুল্ক বা CUSTOMS DUTY সংক্রান্ত বিদেশে পাচার করা অর্থ-সম্পদ ফেরত আনার ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত সুযোগ-সুবিধায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ আনার ক্ষেত্রে যে সুযোগ রাখা হয়েছিল তা বাতিল করা হয়েছে। একইসঙ্গে কম হারে করপোরেট কর সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রেও সংশোধন আনা হয়েছে।
গত ৯ জুন নতুন অর্থবছরের জন্য যে বাজেট ঘোষণা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী, তাতে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে বিভিন্ন খাতে করহার বাড়ানো, করারোপসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়। এরই মধ্যে দেশের ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট মহল কিছু ক্ষেত্রে এসব কর প্রস্তাবের বিরোধিতা করে এবং তা প্রত্যাহারের দাবি জানায়। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবারের মতো এবারও প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হয়েছে।
বাজেটে যেসব সংশোধনী আনা হয়েছে: যেমন, মেডিটেশন সেবার ওপর VALUE ADDED TAX কমানো, আমদানিকরা লিফটের ভ্যাট প্রত্যাহার, আমদানিকরা এবং বিদেশ থেকে পাচারের টাকা ফেরত আনা ও করপোরেট কর হ্রাসের সুবিধা পেতে শর্ত শিথিলসহ কিছু সংশোধনী এনে প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পাস হয়েছে।
গত ৯ জুন বাজেট ঘোষণায় মেডিটেশন সেবার ওপর ১৫ শতাংশ VALUE ADDED TAX আরোপের প্রস্তাব করা হয়। এতে প্রবল আপত্তি জানায় মেডিটেশন সেবাগ্রহণকারীরা। এমন প্রেক্ষাপটে এই সেবার ওপর ভ্যাট হার ১৫ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। এতে যারা মেডিটেশন সেবা নেবেন, তাদের খরচ কমবে।
বাজেট ঘোষণার সময় আমদানি করা লিফটের ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে মোট ৩১ শতাংশ করা হয়। মূলত দেশীয় লিফট শিল্পের সুরক্ষায় বাড়তি কর আরোপ করা হয়। লিফট আমদানিকারকরা বলছেন, এতবেশি কর দিয়ে লিফট আনলে খরচ অনেক বাড়বে। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে আবাসনখাতে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে লিফট আমদানিতে ভ্যাট হার ১৫ শতাংশ প্রত্যাহার করা হয়।
এছাড়া আগের দুই বছরের ধারাবাহিকতায় এবারের বাজেটে শেয়ারবাজারে লিস্টেড এবং নন-লিস্টেড উভয় ধরনের কোম্পানির ক্ষেত্রে বর্তমানের চেয়ে করপোরেট করহার আড়াই শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করা হয়। তবে এই সুবিধা পেতে কঠিন শর্ত জুড়ে দেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়, কোনো কোম্পানিকে এই সুবিধা পেতে হলে তাকে অব্যশই বছরে ১২ লাখ টাকার বেশি লেনদেন ব্যাংকিং চ্যানেলে করতে হবে। তা না হলে আগের রেটে কর পরিশোধ করতে হবে। কোম্পানি ছোট হোক বা বড়, সবার ক্ষেত্রে একই শর্ত প্রযোজ্য। মূলত অর্থিক খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সব লেনদেনকে ব্যাংকিং চ্যানেলের আওতায় নিয়ে আসার জন্য এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, এটি বাতিল হচ্ছে না। বরং ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে শর্ত শিথিল করে এখানে কিছুটা ছাড় দেওয়া হচ্ছে। কোম্পানির লেনদেন ১২ লাখ টাকার পরিবর্তে ৩৬ লাখ টাকায় উন্নীত করা হচ্ছে। অর্থাৎ কোনো কোম্পানি বছরে ৩৬ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন ব্যাংকের বাইরে করতে পারবে। এর বেশি লেনদেন করতে হলে অব্যশই ব্যাংকের মাধ্যমে করতে হবে।
এদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে বিদেশ থেকে নগদ টাকাসহ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি আনার ক্ষেত্রে নির্ধারিত কর দিয়ে বৈধ করার ঘোষণা দেওয়া হয়। বাজেট ঘোষণার পর দেশজুড়ে এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ওঠে।
জানা যায়, সরকার তার অবস্থান থেকে সরেনি। তবে শর্ত কিছু শিথিল করে এ ক্ষেত্রে কিছুটা সংশোধনী আনা হচ্ছে। বিদেশে অবস্থিত কেউ যদি অস্থাবর সম্পত্তি বৈধ ঘোষণা করতে চান, তা হলে ১০ শতাংশ কর দিলে কোনো প্রশ্ন করা হবে না। এখানে করের হার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭ শতাংশ করা হচ্ছে। অন্য দুটি– নগদ টাকা এবং স্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে শর্ত একই রাখা হয়েছে।
এর আগে ৯ জুন জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে আগামী অর্থবছরজুড়ে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার ব্যয়ের বাজেট প্রস্তাব করেন। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৪ লাখ ৩১ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
নতুন বাজেটে আগামী অর্থবছরের জন্য মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। নতুন বাজেটে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে। এনবিআর ৩ লাখ ৭৭ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা পেয়েছে। এটি জিডিপির ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা নতুন বছর ৪০ হাজার কোটি টাকা বাড়ছে। শতকরা হিসাবে তা ১২ শতাংশ।
বাজেটে এনবিআর-বহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। কর-বহির্ভূত রাজস্ব (এনটিআর) আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এ দুই খাতে কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা যথাক্রমে ১৬ হাজার কোটি ও ৪৩ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে নতুন বাজেটে কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে যথাক্রমে ১৩ ও ৫ শতাংশ।
অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেটে মূল লক্ষ্য হলো করোনার অভিঘাত পেরিয়ে দেশকে উন্নয়নের ধারায় প্রত্যাবর্তন। সেই লক্ষ্যে এবার বাজেটের মূল ফোকাস হলো অর্থনীতির সব খাতে সক্ষমতার উন্নয়ন। এ জন্য তিনি এই বাজেটে আয়ের চেয়ে বেশি ব্যয় করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। ফলে এ বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ রাখা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ দশমিক ৬ শতাংশের সমান। ঘাটতির মধ্যে অনুদানসহ বৈদেশিক উৎস থেকে আসবে ৯৮ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা; আর অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আসবে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা, এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে নেওয়া হবে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা।
অপরদিকে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ভোক্তাকে মূল্যস্ফীতি থেকে সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে বাজেটে। এ জন্য ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটে অর্থমন্ত্রী আগামী বছরজুড়ে দেশের মূল্যস্ফীতিকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার প্রস্তাব করেছেন।
তথ্যসুত্রঃ https://www.banglanews24.com/national/news/bd/941036.details
𝗖𝗛𝗜𝗘𝗙 𝗠𝗢𝗩𝗘𝗠𝗘𝗡𝗧 𝗠𝗔𝗞𝗘𝗥 and Corporate Trainer at Corporate Academy, 𝗣𝗮𝘀𝘀𝗶𝗼𝗻𝗮𝘁𝗲 𝘁𝗼 𝗵𝗲𝗹𝗽 𝗽𝗿𝗼𝗳𝗲𝘀𝘀𝗶𝗼𝗻𝗮𝗹𝘀 𝗳𝗶𝗻𝗱𝗶𝗻𝗴 𝘁𝗵𝗲𝗶𝗿 𝗯𝗶𝗴𝗴𝗲𝗿 𝗽𝘂𝗿𝗽𝗼𝘀𝗲 𝗼𝗳 𝗹𝗶𝗳𝗲✳️